সুকন্যা চক্রবর্তী: হারিয়ে ফেলা আর হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে এক অদ্ভুত বিভেদ আছে। হারিয়ে ফেলায় দিনের শেষে থাকে একরাশ শূন্যতা, ঘর হারিয়ে ঠিকানার খোঁজ থাকে সততঃ আর হারিয়ে যাওয়া মানে আসলে ঠিকানাহীন হয়েই জীবনের কাছে ফেরা।
আমরা ভিটেমাটি হারিয়ে ফেলি, পছন্দের কলম হারিয়ে ফেলি, প্রাণের মানুষদের হারিয়ে ফেলি, প্রিয় গন্ধ হারিয়ে ফেলি, প্রিয় স্পর্শ হারিয়ে ফেলি, প্রিয় অভ্যেস হারিয়ে ফেলি। হারিয়ে ফেলে নিঃস্ব হই। হারিয়ে ফেলা সেই সব কিছু আবার ফিরে পেতে আমাদের কাঙালপনা যাওয়ার নয়! আর সেই কাঙালপনা থেকেই বোধহয় আমরা আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে শিখি। নতুন করে কিছু হারানোর নেই, কারুর কাছে কোনও কিছু গচ্ছিত নেই, কেউ কোত্থাও নেই এ অনুভূতির মধ্যে আদৌ কিন্তু কোনও গ্লানি নেই । সব কিছু থেকে হারিয়ে যাওয়া মানেই তৃপ্তি ।
আমাকে কেউ খুঁজে পাচ্ছে না, এমনকি আমিও কাউকে না – এ অনুভূতির মধ্যে আসলেই আনন্দ লুকিয়ে থাকে! এ আনন্দটুকু যদি একবার নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নেওয়া যায়, তবেই বেঁচে যাওয়া সার্থক । এ যে আমি আসছি, যাচ্ছি, কথা বলছি, হাসছি, সকলে আমাকে দেখছে। কিন্তু আসলে সেই মুহূর্তটায় আমি মোটেই নেই, কোত্থাও নেই। আমি যে নেই, সেটা কাউকে জানাতেও নেই! একদম একা এমন হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তগুলো আসলে প্রাণবায়়ুর মতো হয়, কাঠ শুকনো গলায় এক আচলা জলের মতোন হয়, কেবলই জড়িয়ে রাখে শীতলপাটির মতো। হারিয়ে গেলেই রোজ নিজেকে বলতে হয়, ‘তোমায় নতুন করে পাবো বলে, হারাই ক্ষণে ক্ষণ’… রোজ বেঁচে নিতে শিখতে হয়!
সুকন্যা চক্রবর্তী
সাংবাদিক, কলকাতা