“আমরা তো মোমবাতি জ্বালাই, শাহবাগ খুঁড়ে আনে প্রতিবাদ একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার” ৷ এই স্লোগানেই গর্জে উঠলো শাহবাগ চত্বর! ভিড়টা দেখতে পাচ্ছেন? ভাবছেন ওটা সংখ্যালঘুদের ভিড়? হ্যাঁ ওই মানবস্রোতে তো সংখ্যালঘুরাই গর্জে উঠেছেন। ওখানে হিন্দু আছে, মুসলমান আছে, আদিবাসী আছে, আছে উপজাতি, আদতে ওখানে অনেক অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা জানে, যাঁরা বিশ্বাস করে, বঙ্গবন্ধুর জমিতে সন্ত্রাসবাদের ঠাঁই নেই।
আমরা তো মৌন মিছিল আর মোমবাতি জ্বালিয়ে ক্ষান্ত থাকি, দিল্লি হায়দ্রাবাদ গুজরাত ভুলে যাই, আমরা পারিনা। কিন্তু ওরা পারলো। রাজধানীর রাজপথে নেমে আসলো আস্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টা। সংস্কৃতি, বিপ্লব চেতনা আর শিক্ষায় ওরা টুঁটি চেপে ধরল মৌলবাদীদের। ওদের অগ্নিচোখে প্রমাদ গুনলো ধর্মভীরুরা। বাংলাদেশ শুনলো, ‘আমার ভাইয়ের খুনি কে? জবাব দাও’।
স্বভাবতই, প্রত্যেক দেশের সরকারের মতো বাংলাদেশ সরকারও একেবারে নিশ্চুপ। প্রেস বিবৃতিতে ক্ষান্ত থেকেছে হাসিনা সরকার। চুপ থাকলে হবে? যে শাহবাগে একসময় রক্তঝর্ণা বয়েছে, সেই রক্তের প্রত্যেক ফোঁটা আজ বইছে ওপার বাংলার ছাত্র-যুবদের শিরা ধমনীতে। এই রক্ত বড্ড দুষ্প্রাপ্য, এতে কোনো বিষ নাই চাচা!
স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, সাত দফার দাবি। সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার মন্দিরগুলোর সংস্কারের ব্যবস্থা করা, রংপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ড ও লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদে আইন করে মন্দির ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন করা। চব্বিশ ঘন্টার আল্টিমেটাম! কাজ না হলে, বাকিটা বুঝে নেবে মানবতাবাদ আর সন্ত্রাসবাদের দাবাখেলা।
যে জাতি ধর্মের জন্য নয়, ভাষার জন্য লড়াই করে, সেই জাতি সব ছিনিয়ে আনতে পারে। বিপ্লবে আমরা চুম্বন আন্দোলন করি, মার্ক্স লেনিনের আদর্শ আওড়াই, গেরুয়া উল্লাস নৃত্যে মাতি, সবুজ আবির খেলি; ওরা বিপ্লবে একাত্তর আনে, কবর থেকে শহীদদের ডেকে আনে একে একে। দেখতে পাচ্ছেন, ওই জ্বলছে আগুন, জ্বলছে ধর্মভীরু সন্ত্রাসীদের লাশ। আমি দেখছি, সম্প্রীতি হাসছে!