নিজস্ব প্রতিনিধি:
নিয়োগ দুর্নীতির(Recruitment Scam) তদন্ত যত এগচ্ছে, ততই সামনে আসছে নিত্যনতুন চরিত্র। ধৃত তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষ(Kuntal Ghosh) বৃহস্পতিবার দাবি করেন, ‘যা টাকা আছে, সব হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের(Haimanti Gangopadhay) কাছে। তিনি গোপাল দলপতির(Gopal Dalapati) স্ত্রী।’ শুক্রবার সেই হৈমন্তীর বাড়ি ও অফিসের সন্ধানও মিলেছে। কিন্তু হৈমন্ত্রী এখন কোথায় সেই সন্ধান এখনও মেলেনি। তার মধ্যে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে জড়িত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ED আবার দাবি করেছে, নিয়োগ দুর্নীতির কয়েক হাজার কোটি টাকা হৈমন্তীর কাছেই আছে। হৈমন্তীর স্বামী গোপাল দলপতিও গা ঢাকা দিয়েছেন। ED’র দাবি, মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত হৈমন্তীর সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের প্রভাবশালী অংশের ভালো যোগাযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, স্বামী গোপাল দলপতির সঙ্গে হৈমন্তী ডজন খানেক কোম্পানি খুলে সেগুলির মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। কেনা হয়েছে একাধিক জমি ও ফ্ল্যাট। খোলা হয়েছে একাধিক বিউটি পার্লারও।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুরের বাসিন্দা গোপাল দলপতির আবার দমদমে কোচিং সেন্টার ছিল। সেখানে মূলত অঙ্কের টিউশন করাতেন গোপাল। সেই সূত্রে শিক্ষা জগতের কিছু লোকজনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেওয়া বা সার্টিফিকেট পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তিনি নাকি টাকা তুলতেও শুরু করেছিলেন একসময়। আগে তার আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকলেও কুপথে পা বাড়িয়ে আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো করে তোলেন। তার জেরেই দমদম ছেড়ে বেহালায় চলে আসেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে যুবনেতা কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল সহ নিয়োগ দুর্নীতির অন্যান্য মাথাদের পরিচয় হয়। ২০১৬ সাল থেকে পুরোপুরি ‘দুর্নীতি’তে নেমে পড়েন গোপাল। অভিযোগ, এরপর চাকরিপ্রার্থীদের থেকে কোটি কোটি টাকা তোলেন তিনি। সেই টাকা গচ্ছিত রাখা হতো হৈমন্তীর কাছে। বেনামি কোম্পানিতে অনেক টাকা বিনিয়োগ করা হয়। কিছু টাকায় কেনা হয় জমি ও ফ্ল্যাট। ED’র ধারনা গোপাল আর হৈমন্তী দুইজনই এখন মুম্বইয়ে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। তাই সেখানেও এখন তাদের সন্ধান শুরু হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি হাওড়ার বাকসাড়ায় হৈমন্তীর যে পারিবারিক বাড়ি আছে সেখানে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি হৈমন্তীর বাবা-মা, বোন ও পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথাও বলতে চান ED’র আধিকারিকেরা।
গোপালের সঙ্গে হৈমন্তীর আলাপ ঠিক কোন সূত্রে তা এখনও সামনে এসেনি। হৈমন্তীর মায়ের দাবি গোপাল ও হৈমন্তীর বিয়ে হয়েছিল। কুন্তলেরও তেমনই দাবি। কিন্তু গোপালের আগের পক্ষের বউও আছে। সেই বিয়ে এখনও আইনত বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের পথে হাঁটা দেয়নি। সেক্ষেত্রে গোপাল ও হৈমন্তীর বিয়েটাও বৈধ কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। ED’র আধিকারিকেদের ধারনা গোপাল ও হৈমন্তী আসলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে লিভ-ইন করতেন। সেই পরিচয় দিয়েই তারা টালিগঞ্জে ফ্ল্যাট কিনে থাকতে শুরু করেন। গোপালকে নিয়ে হাওড়ার বাড়িতে মাঝেমধ্যে যেতেন হৈমন্তী। স্থানীয় সূত্রে খবর, গোপালের সঙ্গে হৈমন্তীর বিয়ে মেনে নিতে পারেননি দুই পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, অনেক আগেই দু’জনের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তবে সূত্রের খবর, গোপালের সঙ্গে পরিচয়ের পর রকেটের গতিতে উত্থান হয় হৈমন্তীর। শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে টলিউডে জায়গা করে নিতে শুরু করেন তিনি। অভিনয় করেন ‘অচেনা উত্তম’, ‘জাল’ এবং ‘আনটোল্ড’ নামে তিনটি ছবিতে।