সুভাষ পাত্র : “মানুষের জন্য কাজ করাটা আমার একরকম নেশা বলতে পারেন ৷ দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এক অপার আনন্দে বুক ভরে ওঠে ৷ আমার সীমিত সুযোগ ও অর্থ দিয়ে যতটুকু করতে পারি তাতে এক পরম প্রশান্তি পাই”- বলছিলেন নদীয়ার পাপিয়া কর ৷ নিস্বার্থভাবে দুঃস্থ মানুষের পাশে দাড়িয়ে তিনি যেমন মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তেমনি কিছু মানুষের ট্রোলের ও শিকার হয়েছেন ৷ তবু সবকিছুকে পেছনে ফেলে তিনি বরাবরই এগিয়ে গিয়েছেন মানুষের সেবায় ৷ আঁধারের গলিতে ভালোবাসার রঙ তুলিতে এঁকে দিয়েছেন সোনালী সূর্য ৷ তার আলোয় উদ্ভাসিত করে দিয়েছে আঁধারের মানুষগুলির জীবন ৷
এসপ্লাস নিউজের একান্ত সাক্ষাতকারে পাপিয়া তুলে ধরেন তার সমাজসেবায় আসার ঘটনা ৷
“আমি বরাবর হাতের কাজে পটু। ফেলে দেওয়া জিনিস, ভাঙা কাচের টুকরো ইত্যাদি গুছিয়ে রং করে তা দিয়ে নানা ধরনের জিনিস তৈরি করতাম। কলকাতায় বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করেছি। তেমনই একটা মেলা থেকে শুরু হয়েছিল আমার সমাজসেবা”৷
তিনি জানান, নদীয়া জেলার মাঝদিয়াতে থাকেন তিনি ৷ রানাঘাট স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন বদলে মাঝদিয়ার ট্রেন বদলেই বাড়ি যেতে হয় ৷ সেবার সায়েন্স সিটির একটা মেলা থেকে একটু রাত করেই বাড়ি ফেরার পথে রানাঘাট প্ল্যাটফর্মে গিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম ৷ এমন সময় এক এক ভদ্রমহিলা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকলেন। অত রাতে স্টেশনে উনি একা, কিন্তু দেখে ভিখারি বলে মনে হয়নি। আমার কাছে একটু খেতে চেয়েছিলেন। এদিকে আমার ট্রেনের খবর হয়ে গিয়েছে, যে কোনও মুহূর্তে ট্রেন আসবে। তখন ওঁকে খাবার কিনে দেওয়ার একটুও সময় নেই। কোনক্রমে ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বার করে দিয়ে বলেছিলাম খাবার কিনে নিতে। তারপর আবারও ট্রেনের জন্য প্ল্যাটফর্মে এগিয়ে গেলাম। শেষ মুহূর্তে পিছন ঘুরে দেখি টাকাটা হাতে ধরে ভদ্রমহিলা কাঁদছেন। খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সে যাত্রা ট্রেনটা ছেড়ে দিতে পারিনি। বাড়ি ফিরেও মনটা খুঁতখুঁত করছিল। তাই পরের দিন বাড়ি থেকে নিজে রান্না করে রানাঘাট স্টেশনে ওঁর খোঁজে পৌঁছে যাই । তবে জানতে পারি উনি ভোরেই মারা গিয়েছেন। শুনেই আমি ভীষন কষ্ট পাই ৷ তারপর থেকে আর থেমে থাকিনি ৷ হয়তো একজনকে বাঁচাতে পারিনি ঠিকই কিন্তু আরও তো অনেকে আছেন যাঁদের অন্যের দয়ায় বাঁচতে হয়। তাই নিজের সাধ্যমতো তাঁদেরই সেবা করার দৃঢ়প্রতীজ্ঞা নেই ৷ এভাবেই মূলত শুরু হয় মানুষের জন্য কাজ করা ৷
কলকাতার ধর্মতলা চত্বরে পাপিয়া অনাথ পথশিশু থেকে ভিখারিদের পাশে থাকেন সর্বদাই ৷ নদীয়ার মাঝদিয়া থেকেই সেখানে যাতায়েত করে তাদের তাঁদের অন্ন ও বস্ত্রের জোগান দিয়ে হয়ে উঠেছেন অন্নপূর্না ৷ নিজের সীমিত সামর্থ্য দিয়েই দরিদ্রদের সেবা করার ব্রত নিয়েছেন। পথশিশুদের শিক্ষার জন্য ধর্মতলার ফুটপাতের এক কোণে ‘ফুল পাখির আসর’ নামের স্কুল তৈরি করেছেন । তবে তার মূল লক্ষ্য ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থান তৈরী করা ৷ তাদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে কাজের সাথে সংযুক্ত করা ৷ আর তার জন্য প্রয়োজন সরকারী বা সমাজের বিত্তবান মানুষের সাহায্য ৷