অভিজিৎ হাজরা, মুন্সিরহাট (হাওড়া) প্রতিনিধি:
মনে রয়েছে বেহালার পৌলমীকে? যাঁর ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল কিছুদিন আগেই। পৌলমী জোম্যাটো ডেলিভারি গার্ল। একপর্যায়ে ফুটবল খেলা ভুলতেই বসেছিলেন ঘরে ঘরে খাবার সরবরাহের মতো কাজের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে।
একই চিত্র ধরা পড়েছে হাওড়া জেলার মুন্সিরহাটে। মুন্সিরহাটের শেফালী চৌধুরী ও একই ভাবে নিজের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন।
শেফালীর চার দাদা আছে। তারা কেউই বোনের কথা কখনোই ভাবেনি। আর এই কারণেই খেলাধুলা করার বিলাসিতা দেখানোর সাহস পাননি এই জাতীয় ফুটবলার।
শেফালী খেলাধুলার মাধ্যমে নিজের জীবন শুরু করেছিলেন, কলকাতা ময়দানে বিদ্যুৎ স্পোটিং ক্লাব থেকে ১৯৯৩ সালে। তারপর খেলেছেন ইনকাম ট্যাক্সের হয়ে। সেই দলের ও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
স্থান করেও নিয়েছিলেন বাংলার মহিলা ফুটবল দলে। সর্বভারতীয় স্তরেও ফুটবল খেলেছেন। আফসোস এর পরেও কোনো চাকরির ব্যবস্থা হয়নি। শেফালী বর্তমানে অভাবের তাড়নায় স্থানীয় বাজারে ফলের দোকান দিয়ে ফল বিক্রি করছেন। ফল বিক্রি করে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে রোজ লাভ হয় ১৫০ টাকা। এই সামান্য টাকায় কী করে সংসার চালাবে তা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছেন। মোবাইল রিচার্জের ও টাকা থাকে না। তাই এখনও সময় পেলে চলে যান খেপ খেলতে। ওই ভাবেই অর্থ সংগ্রহ করছেন সংসার চালানোর জন্য।
শেফালী বলেন, আমাকে দয়া করে নয়,আমার খেলার অতীত দিনের রেকর্ড দেখেই রাজ্য সরকার যেন একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। অনেক কষ্ট করেছি ও করছি। তবুও ফুটবল খেলা চালিয়ে যেতে পারছি না। অভাবের তাড়নায় স্থানীয় বাজারে ফলের দোকান দিয়ে ফল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। অনেক দিন দু’বেলা পেট ভরে খেতেও পাই না। দাদাদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে লজ্জা করে।
রাণাঘাটের অতীন্দ্র চক্রবর্তী বেহালার পৌলমীকে আবিষ্কার করে প্রচারের আলোয় নিয়ে এসেছিলেন। এবার ও সেই অতীন্দ্র চক্রবর্তী হাওড়া জেলার মুন্সিরহাটের শেফালীকে আবিস্কার করে প্রচারের আলোয় নিয়ে এসেছেন। এই প্রসঙ্গে শেফালী বলেন, অতীন্দ্র ভাইয়ের জন্যই আমার খবর নিচ্ছে মিডিয়ার সাংবাদিকরা। ওঁকে কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাবো, আমি ভেবে পাচ্ছি না। আমি এতদিন জঙ্গলে পড়ে ছিলাম , এখন সবাই আমার খোঁজ খবর নিচ্ছে।
কিন্তু এতে করে তো আর সংসার চালানো যাবে না। একটা ভালো চাকরি না পেলে আমার পরবর্তী জীবনটাই অন্ধকারেই থেকে যাবে।
নিজের এই অদম্য লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে বাংলার এক সময়ের দাপুটে ফুটবল তারকা তথা জাতীয় ফুটবলার শেফালী বলেন, ভোর চারটার সময় ঘুম থেকে উঠে কিটস্ ব্যাগ নিয়ে মুন্সিরহাট থেকে বাসে চেপে কলকাতার ময়দানের ফুটবল মাঠে পৌঁছে যেতাম। মাঠে গিয়ে পাঁউরুটি, কলা খেয়ে টানা প্র্যাকটিস করতাম।আবার দুপুর ২ টায় বাড়ি ফিরতাম। কোনদিন খাবার জুটত তো কোন দিন আবার জুটত না। বাবা দিন মজুর ছিলেন।তিন বছর হল বাবা ও মা দু’জনই মারা গেছেন।এখন আমার পাশে অনেকে থেকে ও কেহই নেই।