নিজস্ব প্রতিনিধি:
দুই বাংলার মাথায় দুই মহিলা। এপার বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ওপার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুইজনেরই সম্পর্ক দিদি-বোনের মতোই। তিস্তা নিয়ে দুই দেশের জল ঘোলা হলেও দুই বোনের সম্পর্কে কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি তা। সেই সুসম্পর্কের বুনিয়াদের ওপর দাঁড়িয়েই এবার এপার বাংলায় মমতার চালু করা ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’ বা BSK’র ধাঁচে পরিষেবা কেন্দ্র ওপার বাংলাতেও গড়ে তুলতে আগ্রহ দেখাল শেখ হাসিনার সরকার। এই ঘটনাই বলে দিচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত কতখানি কার্যকরী ও জনহিতকর। বাংলা ছাড়িয়ে মমতার সাফল্যের অনুগামী হতে চাইছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রও।
সরকারি সুযোগ সুবিধাকে সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় পৌছে দিতে মমতা এপার বাংলায় চালু করেছেন ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’ বা BSK। যেখানে Single Window’র মাধ্যমে ২৮০টির বেশি সরকারি পরিষেবা দেওয়া হয়। গ্রামীণ বাংলার আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে এমন সহায়তা কেন্দ্র। এর মাধ্যমে সরাসরি পরিষেবা পৌছে যায় নাগরিকের মুঠোয়। একই কেন্দ্র থেকে কীভাবে সাধারণ মানুষকে সরাসরি হরেক পরিষেবা দেওয়া যায়, তা দেখতেই সোমবার বাংলাদেশ সরকারের তরঅহে ৪ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল এপার বাংলায় এসেছিলেন। তাঁরা হাওড়া জেলার ডোমজুড় ব্লকে এমনই এক কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে ওপার বাংলাতেও এই ধরনের পরিষেবা কেন্দ্র চালু করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। BSK Model-কেই তাঁরা তাঁদের দেশে বাস্তবায়িত করতে চান। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সেদেশে খানিকটা এমন পরিষেবা থাকলেও মানুষ সরাসরি তার সুবিধা পান না। বরং তা হয় কিছুটা ঘুরপথে। Single Window’র মাধ্যমে এই পরিষেবা কীভাবে ব্লক স্তরে চলে, তার উত্তর খুঁজতেই বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন তাঁরা।
৪ সদস্যের এই দল ডোমজুড়ের BDO গার্গী দাসের সঙ্গে ব্লক অফিস ও সহায়ক কেন্দ্র ঘুরে দেখে। এই অভিনব উদ্যোগে যারপরনাই খুশি তাঁরা। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, ওপার বাংলায় কিছুটা এই ধরনের একটি পরিষেবা দেওয়া হয়। তবে সেখানে সরাসরি মানুষ সব সুযোগ সুবিধা পান না। এপার বাংলায় ব্লক স্তরে সেই কাজ কীভাবে হয়, তা ঘুরে দেখে দেশে ফিরে গিয়ে এ নিয়ে তাঁরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন যাতে একটি কেন্দ্র থেকে দ্রুত সব ধরনের পরিষেবা দেওয়া যায়। সম্ভব হতে দ্রুত তা চালুর চেষ্টাও করবেন তাঁরা। এই প্রতিনিধি দল হাওড়া শহরেও একটি BSK ঘুরে দেখেন। ২৮২টির বেশি সরকারি সুবিধা কীভাবে চলছে, তা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের বুঝিয়ে দেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। এদিকে, রাজ্য সরকার এক প্রেস বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের এই উদ্যোগ ও সফরকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, রাজ্যের এই উদ্যোগ দেখে প্রতিবেশী দেশ যেভাবে উজ্জীবিত হয়েছে, তাতেই প্রমাণ হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়েছে। রাজ্যে এই মুহূর্তে ৪ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ বাংলা সহায়তা কেন্দ্র থেকে সাড়ে ৯ কোটি পরিষেবা পেয়েছেন। এর মধ্যে ৯২ শতাংশ পরিষেবাই পেয়েছেন গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা। ভবিষ্যতে আরও কিছু পরিষেবাকে এর আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।