স্নিগ্ধা পাত্র : আচ্ছা, একটা কথা না বলে একেবারেই পারছি না ৷ যে দেশের মানুষ দুবেলা ঠিকমতো খাবার খেতে পারেনা, অভুক্ত থাকতে হয় , সেদেশে কুকুরের বিয়ে হয়, জন্মদিন হয় , আবার মারা গেলে ঘটা করে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ও করা হয় ! ভাই , ইয়ার্কির একটা সীমা থাকা দরকার ৷ যেখানে প্রতিনিয়ত করোনা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে , রাজ্য সরকার , কেন্দ্র সরকার, তাবত বিশেষজ্ঞরা রাতদিন এক করে দিচ্ছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে ৷ সমাজকর্মীরা- রাজনীতিবিদরা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন দেশের মানুষের অসহায় অবস্থার পাশে দাঁড়াতে, সেখানে মানুষ কুকুরের শ্রাদ্ধনুষ্ঠান করছে ! হায়রে বাংঙালি আর আমার বাংলা !
আমাদের কি আসে যায় ? আমরা তো দিব্যি ঘরেই আছি , মাস্ক পরে স্যানিটাইজ করে ,কোভিড বিধি মেনেই তবে ঘর থেকে বের হই ! আমাদের কি ! কে খেতে পেলো কে না পেলো তার জন্য তো সরকার আছে ৷ আমরা তো আমজনতা ৷ আপনারা শুধুই আমাদের দোষ খুঁজে বেড়ান ৷ সরকার কি বলেছে , কুকুরের বিয়ে দেয়া যাবেনা ? শ্রাদ্ধ করা যাবেনা ? তাতে পাত পেড়ে লোক খাওয়ানো যাবেনা ? কথায় কথায় আপনারা শুধু হাইকোর্ট দেখান ৷
তা ঠিকই বলেছেন মশাই ৷ তবে একটা গল্প শুনে যান ৷ একদেশে এক রাজা ছিলো ৷ রাজার দুজন মন্ত্রী ছিলো ৷ সাথে পাইক বরকন্দাজ ও ছিলো ৷ ঘোড়ায় চেপে টগবগিয়ে, আসলো রাজা খাজনা নিতে ৷ পথের ধারে ঠায় দাড়িয়ে, দেখলো রাজা তেলের ঘানি ৷ আদেশ মন্ত্রী , এখনি আনি ৷ যাচ্ছে রাজা বনের মাঝে ৷ বাহারী চোতরা ফুলে সাজে ৷ বললো মন্ত্রী এখনই চাই , জী হুজুর আনছি তাই ৷ রাখলো রাজা নিজের পিছে , ভাবলো রানী খুশিই হবে ৷ চোতরা পাতা ফুলের সাথে, হঠাৎ যেনো খুজলি ওঠে ৷ কোথায় গেলো মুকুট – পোশাক , রাজামশাই পড়লো ধপাস ৷ বললো মন্ত্রী যাও রাজ্যে ৷ সবাইকে দাও চোতরা মেখে ৷
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) তথ্যমতে ভারতে প্রতিদিন ২৩ কোটি মানুষ অভুক্ত থাকে ৷
তবে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (আইএফপিআরআই) মতে এটি ২১ কোটি ৩০ লাখ। আইএফপিআরআই এর তথ্যমতে ভারতের ২১ শতাংশ মানুষের পুষ্টির অভাব রয়েছে ৷ যদিও সেই সংবাদের সত্যতা স্বীকার করেনি সরকার ৷ তবুও সংবাদ মাধ্যমের খবরে গত দুএক বছরে রাজধানী দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ,ওড়িশা, বিহার এবং পন্চিমবঙ্গ থেকেও অনাহারে ও অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঘটনা সংবাদে উঠে এসেছে ৷ তবে করোনাকালীন সময়ে সেই সমস্যা আরও প্রকট ৷ একদিকে লকডাউনে মানুষ কাজ হারিয়েছে ৷ যারা নিত্য কাজ করেন , শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ তারা কাজ হারিয়ে কতটা অবর্ননীয় পরিস্থিতিতে রয়েছেন সেটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়না ৷ আমরা কুকুরের বিয়ে আর শ্রাদ্ধ নিয়ে মেতে থাকি ! করোনাতে আছেই বা কি ? সব বন্ধ ৷ এইটুকু যা এনটারটেনমেন্ট ৷ আপনাদের টাকা আছে , সক্ষমতা আছে কুকুরের বিয়ে দেয়ার ৷ আপনাদের সক্ষমতা আছে কুকুরের শ্রাদ্ধনুষ্ঠানে পাত পেড়ে দইমিষ্টি খাওয়ানোর ৷ আচ্ছা আপনাদের কি সামর্থ নেই আপনার অভুক্ত প্রতিবেশীকে একবেলা খাবার দেবার ? তবে তো এই করোনার গ্রাস সরকারকে ততটাও চাপে ফেলতে পারতো না ৷ অন্তত একটা বিষয়ের উদ্বেগ কিছুটা কমতো ৷ আমিও ওই আপনাদেরই কাতারে ৷ আপনাদের মতই আমারও চিন্তা ভাবনা ৷ আমিও আপনাদের মতই ভাবি , “মানুষ আমরা, কবে মানুষ হবো” !