নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) দায়ের করা একটি মামলার জেরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের(Panchayat Election) দিনক্ষণ ঘোষণার ওপর কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) সাময়িক একটা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই কারণেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন(West Bengal State Election Commission) ওই নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা করতে পারছে না। কিন্তু তাঁরা হাতগুটিয়েও বসে থাকছেন না। বরঞ্চ তলে তলে তাঁরা নির্বাচনের প্রস্তুতি বেশ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। ইতিমধ্যেই তাঁরা আসন বিন্যাসের কাজ শেষ করে ফেলেছেন, ভোটার তালিকাও প্রকাশ করে দিয়েছেন। এবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, কমিশন ৩ দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতে চাইছে পুলিশি নিরাপত্তার(Police Security) ঘেরাটোপে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির জন্য একটি দফা ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির জন্য ২টি দফায় ভোট করাতে চাইছে কমিশন। যদিও নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে রাজ্য সরকার চাইছে এক দফায় ভোট। আপাতত সবাই তাকিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দিকে। কেননা শুভেন্দু অধিকারীর দায়ের করা মামলায় পুলিশের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর দাবিও জানানো হয়েছে। সেই মামলায় আদালত কী রায় দেয় কার্যত তারওপরেই এখন পঞ্চায়েত ভোটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। তার জেরেই পুলিশি নিরাপত্তায় পঞ্চায়েত নির্বাচন করানোর বিষয়টি পাকা হয়েছে। বুথে বুথে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী দিয়েই ভোট করাতে চাইছে রাজ্য সরকার যা মেনে নিয়েছে কমিশন। তবে সেই জায়গায় কমিশন চাইছে ৩ দফায় ভোট করতে যাতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও ফাঁক না থাকে যার জন্য কমিশনকে না আদালতে অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়। তাই মনে করা হচ্ছে ২ অথবা ৩ দফায় এবার পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে। গত বছর পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই শতাধিপ পুরসভায় ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই নির্বাচন মোটের ওপর শান্তিপূর্ণই ছিল। বিরোধীরাও সেভাবে অভিযোগ তোলার সুযোগ পাননি। তাই সেই মডেলকে সামনে রেখেই এবার পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতে চাইছে রাজ্য সরকার যা মেনে নিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তবে এটাও ঘটনা যে এবারে গতবারের থেকে ৫৮ লক্ষ ভোটার বেড়েছে পঞ্চায়েতে। গতবার সংখ্যাটি ছিল ৫ কোটি ৮ লক্ষ ৩৫ হাজার ২জন। এবারে সেটাই বেড়ে হয়েছে ৫ কোটি ৬৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ১১৯জন। বৃদ্ধির পরিমাণ ১১.৮ শতাংশ। এই বিপুল সংখ্যক ভোটদাতা যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে আসতে পারেন, সে কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে কমিশনকে।
অন্যদিকে, আপাতত ৫৯ হাজারের বেশি বুথের পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছে। অক্সিলিয়ারি বুথ ধরলে সংখ্যাটা আরও কয়েক হাজার বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে এক দফায় ভোট করাতে গেলে সব বুথে সমান সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এর জন্য যে সংখ্যক পুলিস কর্মী প্রয়োজন, তা রাজ্যের হাতে নেই। ফলে সিভিক ভলান্টিয়ার, হোম গার্ডদের মোতায়েন করতে হবে। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন-আপত্তি উঠতে পারে। তাই ভোটের দফা বাড়ানোই একমাত্র বিকল্প। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কলকাতা হাইকোর্টে শুভেন্দুর দায়ের করা মামলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের যে দাবি জানানো হয়েছে তা আপাতত কৌশলগতভাবে মোকাবিলার কথা ভাবছে কমিশন।