স্নিগ্ধা পাত্র : আজকের ঘটনা দিয়েই শুরু করি ৷ সুন্দরবনের মোল্লাখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট মোল্লাখালির কালিদাসপুর গ্রামের ঘটনা ৷ ১০ বছর বয়সী পূজা মৃধাকে সাপে কাটে ৷ তবে সেখানে প্রথমেই করা হয় ঝাঁড়ফুক ৷ প্রায় ৩ ঘন্টা অতিবাহিত হবার পর নিয়ে গিয়েছিল স্থানীয় হাসপাতালে ৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন পৌছানোর অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে তার ৷ কুসংস্কারের বলি এখানেই শেষ নয় ৷ তাকে সৎকার না করে প্রাণসঞ্চারের আশায় ভাসিয়ে দেয়া হলো সুন্দরবনের নদীতে ৷ ভাবা যায় ?
কদিন আগেই মালদা থানার দক্ষিণ ভাটরা এলাকার ৫০ বছর বয়সী বূধিয়া হেমব্রম নামের এক বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ ৷ স্থানীয়দের দাবি তার ছেলেরা ডাইনী মনে করে মা কে পিটিয়ে মেরেছে ৷ সত্যিই বিভৎস ৷ বড়ই অমানবিক ৷
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বাস করে মানুষ কিবাবে কুসংস্কারে বিশ্বাস করতে পারে সেটিই ভাবনার বিষয় ৷ আর সত্যি বলতে কি এরকম আরো কুসংস্কারের ঘটনার বলি নারীরাই ৷
সরকারী পরিসংখ্যান বলছে গত বছর ১৬০ জন কুসংস্কারের বলি হয়েছেন ৷ তবে বেসরকারি মতে কুসংস্কারের কারনে নারীদের বলির সংখ্যাটা অনেক বেশি৷ বিশেষ করে মধ্য, পূর্ব ও উত্তর ভারতে কুসংস্কারে বিশ্বাস করে নারীদের হত্যা করার সংখ্যাটা বেশী ৷ এখন দেখছি এর রেশ এ রাজ্যেও আনুপাতিক হারে বাড়তে শুরু করেছে ৷ তবে আমার প্রশ্ন পুলিশ-প্রশাসন বা সরকার এ ধরনের কুসংস্কার প্রতিরোধে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছেনা কেন ? আর নিলেও সেটি নিশ্চই ব্যর্থ হচ্ছে যে কারনে সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে ৷ পুলিশ থাকতে তারা সাহস পায় কি করে ? অবশ্য পুলিশের দাবি এসব ঘটনা পুলিশ পর্যন্তই আসে না ৷ তবে যেটি দেখা যায় , গ্রামের সহজ সরল মানুষ কোন বিপদে পড়লে তার সমাধানের জন্য হাজির হয় মোড়ল কিংবা গুনিনের কাছে ৷ এরপর চলে ঝাঁড়ফুক কিংবা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে গোটা গ্রামকে নারীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানো ৷ জনমনে তৈরী করে দেয়া হয় এক ধরনের মিথস্ক্রিয়া ৷ কোনো ঘটনা যদি পুলিশ কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়ও তবে সেটি বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতায় আটকে পড়ে ৷ অপরাধীও সেই দীর্ঘ সময়ে স্বাক্ষী প্রমান সহ নানাবিধ আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে ছাড়া পেয়ে যায় ৷
অনেক বিচারিক কার্যক্রমের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে ৷ ১৮ বছর ধরে বিচারিক কার্যক্রমের পর সূর্যনেল্লি গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন রায় দেয়া হয়েছে ৷ মগরাহাটের আব্দুল আহিদ লস্করের ২৯ বছর পর জমি ফেরতের রায় দেয়া হয়েছে ৷ তবুও রায়ের মুখ দেখেছে ৷ ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১২৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, খোরপোষের মামলা ছ’মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। অথচ বাস্তবে দেখা গিয়েছে দুই থেকে চার বছরের আগে সেসব মামলা নিস্পত্তিই হয়না ৷ বিচার ব্যাবস্থারও কোনো দোষ নেই ৷ কারণ সেখানেও জনবলের চরম সংকট ৷ তাহলে পদক্ষেপ টা কে নেবে ? সরকার কি বিচারব্যাবস্থার প্রতি উদাসীন ? নাকি একজন আরেক জনের উপর দায় চাপাতে থাকবে আর তার বলি হবে নারীরা, এই প্রশ্ন রেখে যাই ৷
চীফ এডিটর
এসপ্লাস নিউজ